মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের নির্দেশিকা

20-06-2021 06.32.32

সাধারণভাবে বলতে গেলে মিউচুয়াল ফান্ড কাঠামোতে একটি এসেট ম্যানেজার বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তাদের ছোট ছোট সঞ্চয় একত্রিত করে একটি বড় ফান্ড গঠন করে। তারপর ওই ফান্ড থেকে, এসেট ম্যানেজার তার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বিভিন্ন লিস্টেড কোম্পানির শেয়ার, মানি মার্কেট ইন্সট্রুমেন্টস, গভর্মেন্ট এবং কর্পোরেট বন্ড ইত্যাদি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে, যখন এইসব বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা অর্জিত হয় তা আনুপাতিক হারে এই ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। ফলে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী সহজেই, তার অল্প বিনিয়োগের বিপরীতে একটি ভাল মানের ডাইভারসিফাইড পোর্টফলিওতে বিনিয়োগ করে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হতে পারেন। এ ধরনের সমন্বিত বিনিয়োগের মাধ্যমকে মিউচুয়াল ফান্ড বলা হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে একজন ব্যাক্তি বিনিয়োগকারী নিন্মোক্ত সুবিধাগুলো পেতে পারেনঃ

ক. দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রিত ঝুকি নিয়ে উচ্চহারে চক্রবৃদ্ধি মূনাফা লাভ করা

খ. আয়কর রেয়াতসহ অন্যান্য কর সুবিধার যথাযথ ব্যবহার

গ. নতুন IPO-গুলো থেকে লাভবান হওয়া (মিউচুয়াল ফান্ডগুলো IPO-গুলো কোটা সুবিধা পায় এবং সম্পদব্যবস্থাপকরা Book-building IPO প্রক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত কার্যকরভাবে অংশগ্রহন করতে পারে)

ঘ. সুলভে বিনিয়োগ/ সম্পদ ব্যবস্থাপকদের পেশাগত দক্ষতা ও গবেষণা সেবা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া

কিছু কিছু মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ারবাজারে অন্যান্য লিস্টেড শেয়ার এর মত ক্রয়-বিক্রয় করা যায়- এদেরকে ক্লোজড এন্ড বা মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড বলে। আবার কিছু কিছু মিউচুয়াল ফান্ড সরাসরি এসেট ম্যানেজারের কাছ থেকে কিনতে বা বিক্রি করতে হয় – এরা ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে, একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করাটাই বেশি উপযুক্ত।

সারাবিশ্বে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশ এধরনের ফান্ড এখনো খুব সুপরিচিত নয়। বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সর্বমোট বিনিয়োজিত সম্পদের পরিমাণ জিডিপির মাত্র ০.৬%; অথচ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই অনুপাত ৬০% এর বেশি এতদ্বসত্ত্বেও বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রি খুব দ্রুত গতিতে সামনের দিকে আগাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে খুব ভালো রিটার্ন জেনারেট করেছে এরকম পুরনো এসেট ম্যানেজারদের (যেমন- VIPB AML) পাশাপাশি- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নতুন বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিশীল এসেট ম্যানেজার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-এর কাছ থেকে লাইসেন্স পায়। তারা নতুন বেশ কিছু মিচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের কাছে নিয়ে এসেছে – যেগুলোর পারফরম্যান্স বেশ ভালো। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং আস্থা মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির উপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।

মিউচুয়াল ফান্ড প্রায় ২৫০ বছর পুরনো একটি বিনিয়োগের মাধ্যম। এর কাঠামোতে তিনটি প্রধান অংশ আছে- ১) BSEC- নিবন্ধিত একটি ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান যার কাজ হচ্ছে সব সময় ট্রাস্ট-ডিড চুক্তি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা, ২) BSEC- নিবন্ধিত একটি কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠান যা একটি নির্দিষ্ট মিচুয়াল ফান্ডের অধীনে থাকা সমস্ত সম্পদ নিরাপদে রাখে; এবং ৩) BSEC- নিবন্ধিত একটি এসেট ম্যানেজার বা সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান যা নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ যথাযথভাবে বিনিয়োগের দায়িত্বে থাকে।

ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ফান্ডের সর্বশেষ নেট এসেট ভ্যালু বা সম্পদ মূল্য ওই মিউচুয়াল ফান্ডের এসেট ম্যানেজারের ওয়েবসাইটে থেকে জানতে পারেন। এছাড়া এসেট ম্যানেজমেন্ট অপারেশনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে জমা দেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের কি কি বিনিয়োগ আছে তা সহজেই ওই মিউচুয়াল ফান্ডের ত্রৈমাসিক আর্থিক বিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত পোর্টফোলিও বিবরণী দেখে সহজেই জানতে পারে।

বাংলাদেশ এই মুহূর্তে প্রায় ৩৪ টি ক্লোজড এন্ড বা মেয়াদী এবং ৬৮ টি ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড আছে। কিন্তু এর সবই একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য যথা উপযুক্ত নাও হতে পারে। তাহলে কিভাবে আমরা আমাদের জন্য সঠিক মিউচুয়াল ফান্ডটি বেছে নিতে পারি? এর জন্য আমরা কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরন করতে পারি – যা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. সম্পদ ব্যবস্থাপক দলটির নৈতিক এবং গুণগত মান: একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড তার বিনিয়োগকারীকে দীর্ঘমেয়াদে কতটুকু লাভবান করতে পারবে তার অনেকটুকু নির্ভর করে ওই মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক দলটির নীতিগত এবং গুণগত মানের উপর। আমাদের চিন্তা করতে হবে যেই দলটি আমাদের কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে তারা কতটুকু নির্ভরযোগ্য এবং পেশাদার- তাদের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার উপর যথেষ্ট প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা আছে কিনা- বিনিয়োগের ব্যাপারে তাদের দর্শন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কেমন- তারা অতীতের বিনিয়োগকারীদের জন্য কি ধরনের মুনাফা উপহার দিতে পেরেছে – এইসব ব্যাপার যথাযথভাবে বিবেচনা করা খুবই জরুরী। কিছু ব্যাপার আমরা খুব সহজেই গুগল সার্চ ব্যবহার করে জানার চেষ্টা করতে পারি; যেমন সম্পদ ব্যবস্থাপক বা এর উচ্চপদস্থ কোন অফিসারের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পেশাদার বা নৈতিক অনিয়মের অভিযোগ আছে কিনা। আমরা আর্থিক খাতে কাজ করে এরকম বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকেও এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে পারি। পাশাপাশি আমাদের দেখা উচিত যে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিটির দক্ষ কোন রিসার্চ টিম আছে কিনা; থাকলে তাদের কিছু রিসার্চ রিপোর্ট পড়ে তাদের দক্ষতা সম্পর্কে সহজেই একটি বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করা যায়। এছাড়াও কোন একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডে যদি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা এর মূল অফিসারদের নিজস্ব বিনিয়োগ থাকে, তাহলে ওই ফান্ডে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি আস্থা রাখতে পারেন – কারণ এক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের স্বার্থ একই সুতোয় বাঁধা থাকে।

২. ফান্ড ব্যবস্থাপনা ব্যয়: একটি মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটা মুনাফা দিতে পারবে তা পুরোপুরি তার সম্পদ ব্যবস্থাপকের নিয়ন্ত্রণে নাও থাকতে পারে, কিন্তু ফান্ড পারফরমেন্সের কিছু কিছু ব্যাপার- সম্পূর্ণভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপকের নিয়ন্ত্রণাধীন। যেমন বিভিন্ন খাতে ফান্ড থেকে ব্যয় করার হার। সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে যেসব ফান্ড তাদের গঠন-প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন খাতে (যেমন- ফর্ম তৈরি করা, প্রসপেক্টাস প্রিন্টিং খরচ, বিভিন্ন আইনি খরচ ইত্যাদি) অনেক বেশি ব্যয় নির্বাহ করে, তারা সাধারণভাবে বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দিতে পারেনা। যদিও মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী, একটি নতুন মিউচুয়াল ফান্ড তার প্রস্তাবিত মূলধনের তুলনায় সর্বোচ্চ ৫% পর্যন্ত প্রারম্ভিক গঠন প্রক্রিয়ায় ব্যয় করতে পারে, অনেক ক্ষেত্রেই বড় প্রস্তাবিত মূলধন বিশিষ্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রস্তাবিত মূলধনের পুরোটা তুলে আনতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক ১০০ কোটি টাকা প্রস্তাবিত মূলধনের একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করার উদ্যোগ নিল এবং মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী ৫ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে প্রারম্ভিক ব্যয় করল। পরবর্তীতে যদি সে ১০০ কোটি টাকা প্রস্তাবিত মূলধনের মধ্যে মাত্র ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে এবং ওই ৩০ কোটি টাকা নিয়েই যদি ওই মিউচুয়াল ফান্ডটি যাত্রা শুরু করে – তবে সত্যিকার ভাবে ওই মিউচুয়াল ফান্ডটির প্রারম্ভিক গঠন-ব্যয় হলো তার মূলধনের ১৭% – যা অনেক বেশি এবং পরবর্তীতে এর কারণে এই ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির মুখে পড়ে। উল্লেখ্য এই ধরনের প্রারম্ভিক গঠন-ব্যয় হিসাবের খাতায় (ব্যালান্স শিটে) শুরুতে সম্পদ হিসেবে দেখানো হয় এবং পরবর্তীতে সাত বছর ধরে সমান ভাগে ব্যয় হিসাবে দেখানো হয়। তাই একদম শুরুতে নেট এসেট ভ্যালুর উপর এর কোন প্রভাব পড়ে না। তাই কোন ফান্ডে বিনিয়োগ করার সময় প্রসপেক্টাস থেকে ওই ফান্ডের প্রস্তাবিত মূলধন কম ছিল কিনা এবং প্রারম্ভিক গঠন-ব্যয়ের পরিমাণ কত ছিল এবং তা প্রস্তাবিত মূলধনের তুলনায় কম ছিল কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে। এছাড়াও ফান্ডে মূলধনের তুলনায় খুব বেশি ট্রেড করা হচ্ছে কিনা (বা বেশি ঘন ঘন বিনিয়োগ ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে কিনা) এবং বিনিয়োগ ক্রয় বিক্রয় করার ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ কমিশনের হার কত সেগুলো যাচাই করে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ০.২০% বা তারও কম ব্রোকারেজ কমিশন একটি মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য সাধারণভাবে যথাযথ ধরে নেওয়া যায়।

৩. বিনিয়োগের দর্শন এবং পদ্ধতি: বিনিয়োগের দর্শন আসলে কিছু নীতিমালা যা একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক বিভিন্ন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগতভাবে অনুসরণ করে। একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড তার বিনিয়োগকারীদের জন্য কি কি উদ্দেশ্য অর্জন করবে (ইনভেস্টমেন্ট অবজেক্টিভ) এবং সেই সব উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একজন সম্পদ ব্যবস্থাপক কিভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করবে সেটা সম্পর্কে একজন বিনিয়োগকারীর ধারণা থাকা উচিত। এ সম্পর্কিত তথ্য নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের প্রসপেক্টাসে এবং ত্রৈমাসিক পোর্টফোলিও বিবরণীতে বা ফ্যাক্টশীট-এ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সম্পদ ব্যবস্থাপকের দর্শন এবং চিন্তাপদ্ধতির সাথে একজন বিনিয়োগকারী দর্শন এবং চিন্তাপদ্ধতির যত মিল থাকবে প্রত্যাশা এবং বাস্তব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পার্থক্য তত কম হবে। একজন সম্পদ ব্যবস্থাপক তার বিনিয়োগের দর্শন সম্পর্কে যা বলছে আর কার্যক্ষেত্রে যা করছে তার মধ্যে বড় পার্থক্য আছে কিনা তা যাচাই করা উচিত। যেমন কোন একজন সম্পদ ব্যবস্থাপক যদি ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সাধারণভাবে উদ্বিগ্ন থাকে কিন্তু তার পোর্টফোলিও বিবরণীতে যদি দেখা যায় বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ারে তার উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আছে তাহলে বোঝা যায় যে তার বিশ্লেষণের সাথে কার্যক্রমের যথেষ্ট মিল নাই যা ক্ষেত্রবিশেষে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। আবার যদি কোন সম্পদ ব্যবস্থাপক ফান্ডামেন্টাল ভ্যালু ইনভেস্টিং দর্শন নিয়ে কাজ করে বলে দাবী করে কিন্তু তার পোর্টফোলিও বিবরণীতে যদি দুর্বল মৌলভিত্তির বা সুশাসনের অভাব আছে এরকম কোম্পানির শেয়ারে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ পাওয়া যায় তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তা সতর্কবার্তা বলে বিবেচিত হবে। বিনিয়োগ পদ্ধতির ক্ষেত্রে- গত এক বছরের গড় শেয়ারমূল্যের তুলনায়, অতি উচ্চ দামে মিউচুয়াল ফান্ডে কোন শেয়ার কেনা হয়েছে কিনা অথবা খুব কম দামে পোর্টফলিওতে থাকা কোন শেয়ার বিক্রী করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে।

৪. অতীতে পারফর্মেন্সের ট্র্যাক রেকর্ড: একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক অতীতে বিভিন্ন সময়ে তার বিনিয়োগকারীদের কি ধরনের মুনাফা দিতে পেরেছেন তা বিশ্লেষণ করে একজন বিনিয়োগকারী মূল্যবান তথ্য পেতে পারেন। মিউচুয়াল ফান্ড এর ক্ষেত্রে, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতি বৃহস্পতিবার তাদের ফান্ডগুলোর নেট এসেট ভ্যালু ঘোষণা করেন- ওয়েবসাইট থেকে কোন একটি ফান্ডের অতীতের দীর্ঘমেয়াদী নেট এসেট ভ্যালু ডাটা নিয়ে বিশ্লেষণ করলে একজন বিনিয়োগকারী বুঝতে পারবেন যে সাধারণ শেয়ার বাজার সূচক এর তুলনায় ওই নির্দিষ্ট সম্পদ ব্যবস্থাপক কতটুকু ভালো করেছেন। যদি কোন একটি নির্দিষ্ট বছর DSEX শতকরা ৮০% মূনাফা দিয়ে থাকে আর একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড যদি ঐ একই সময়ে ২০% রিটার্ন জেনারেট করতে পারে, তবে সাধারণভাবে বোঝা যায় যে ওই সম্পদ ব্যবস্থাপক অন্য বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের তুলনায় ভালো ফলাফল দিতে পারেন নি। আবার যদি কোনো একটি বছর DSEX শতকরা -২৫% রিটার্ন দিয়ে থাকে আর একটি মিউচুয়াল ফান্ড যদি তার বিনিয়োগকারীদের -৩% রিটার্ন দিয়ে থাকে, তাহলে ওই ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক আপেক্ষিকভাবে বেশ সফল হয়েছে বলেই বোঝা যায়। উল্লেখ্য, অতীত পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের সময় বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে সম্পদ ব্যবস্থাপকের দীর্ঘমেয়াদী পারফরম্যান্স লক্ষ্য করা- কেননা স্বল্পমেয়াদে ( এক বা দুই বছর মেয়াদে) একজন ব্যবস্থাপক শুধুমাত্র সৌভাগ্য বা অন্য যেকোন কাকতালীয় কারণে ভালো রিটার্ন জেনারেট করতে পারলেও সেটা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয় না। একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বোঝা যায় গড়-হিসাবে তাদের সফল এবং মন্দ বিনিয়োগের সংখ্যার আনুপাতিক হার দেখে। অর্থাৎ অল্পকিছু ভালো বিনিয়োগ থেকে যদি একজন সম্পদ ব্যবস্থাপকের সফলতার বেশিরভাগ অংশ আসে এবং অন্যান্য বেশিরভাগ বিনিয়োগ যদি খারাপ রিটার্ন দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে ওই সম্পদ ব্যবস্থাপকের বেশিরভাগ বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ভালো ছিল না।

একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক বিনিয়োগকারীদের কি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ- বিশেষ করে ক্লোজড এন্ড বা মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ক্ষেত্রে। স্টক ডিভিডেন্ড বা RIU ইস্যুকারী মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড গুলো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে বলেই বিশ্লেষণে দেখা যায়। অন্যদিকে, ওপেন এন্ড বা বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে লভ্যাংশের হার খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় কেননা এসব ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় এসেট ম্যানেজারের কাছে ইউনিট সারেন্ডার করে কোন আয়কর না দিয়েই তার মুনাফা এবং বিনিয়োগ তুলে নিতে পারে।

একজন বিনিয়োগকারীর উচিত কোন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে তার পোর্টফোলিও বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা যে তাতে কি ধরনের কোম্পানির শেয়ার ধারণ করা হচ্ছে, কি দামে এই শেয়ারগুলো কেনা হয়েছে, ধারণকৃত সিকিউরিটির সংখ্যা কি অনেক বেশি বা খুবই কম কিনা, পোর্টফোলিও টি কি বেশি এগ্রেসিভ বা ডিফেন্সিভ কিনা ইত্যাদি।

পরিশেষে বলা যায় মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে সঠিক সম্পদ ব্যবস্থাপক বা এসেট ম্যানেজার নির্বাচনের উপর। এই কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে যেকোনো বিনিয়োগকারী দীর্ঘমেয়াদে খুব ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারেন- অন্যথায় সাধারনত কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না।

সঞ্চয় ডটকমের মিউচুয়াল ফান্ড বিশ্লেষণ পদ্ধতি:

ক. এসেট ম্যানেজারের অতীত ট্র্যাক–রেকর্ড বিশ্লেষণ:

১. তিন থেকে পাঁচ বছর বা তারও বেশি মেয়াদকালের বার্ষিক রিটার্নের হার এবং তা শেয়ারবাজারে সাধারণ সূচক এর তুলনায় কতটা কম বা বেশি তা নির্ণয় করা

২. ব্যবস্থাপনাধিন মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা করার হার

৩. রেগুলেটরি বিষয় সমূহঃ

– ফান্ড থেকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে কিনা

– ব্যবস্থাপনাধিন মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড এর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে কিনা

– RIU ইউনিট ইস্যু করা হয়েছে কিনা

খ. খরচ বা ব্যয় অনুপাত:

১. সর্বশেষ হিসাব বর্ষের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী বার্ষিক ব্যয় অনুপাত

২. ইউনিট ক্রয় বা সারেন্ডার-এর ক্ষেত্রে কোন বাড়তি ফি প্রযোজ্য আছে কিনা

৩. পোর্টফোলিও টার্নওভার রেশিও বিশ্লেষণ

৪. প্রারম্ভিক ব্যয় ও প্রারম্ভিক মূলধনের অনুপাত

গ. বিনিয়োগের গুণগত মান বিশ্লেষণ:

১. নন লিস্টেড কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের হার

২. লিস্টেড এবং নন লিস্টেড কোম্পানির শেয়ারের সর্বমোট বিনিয়োগের হার

৩. সরকারি এবং কর্পোরেট বন্ড ও অন্যান্য ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের হার

৪. নগদ অর্থ ধারণের হার